All writings in Bengali and Sanskrit including brief works written for the newspaper 'Dharma' and 'Karakahini' - reminiscences of detention in Alipore Jail.
All writings in Bengali and Sanskrit. Most of the pieces in Bengali were written by Sri Aurobindo in 1909 and 1910 for 'Dharma', a Calcutta weekly he edited at that time; the material consists chiefly of brief political, social and cultural works. His reminiscences of detention in Alipore Jail for one year ('Tales of Prison Life') are also included. There is also some correspondence with Bengali disciples living in his ashram. The Sanskrit works deal largely with philosophical and cultural themes. (This volume will be available both in the original languages and in a separate volume of English translations.)
চন্দ্র ধীর গতিতে মেঘের কোলের ভিতর দিয়া বহিয়া যাইতেছিল ৷ নীচে নদী কুল কুল শব্দে বায়ুর সঙ্গে সুর মিশাইয়া নাচিতে নাচিতে বহিয়া যাইতেছিল ৷ আধ জোছনা আধ অন্ধকারে মিশিয়া পৃথিবীর সৌন্দৰ্য্য অপূৰ্ব্ব দেখাইতেছিল ৷ চারিদিকে ঋষির আশ্রম ৷ এক একটী আশ্রম নন্দনবনকে ধিক্কার প্রদান করিতেছিল ৷ এক একখানি ঋষির কুটির তরু, পুষ্প ও বৃক্ষলতা শােভিত হইয়া অপূৰ্ব্ব শ্রী ধারণ করিয়াছিল ৷ একদিন এইরূপ জ্যোৎস্নাপুলকিত রাত্রে ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠদেব সহধর্মিণী অরুন্ধতী দেবীকে বলিতেছিলেন, “দেবী, ঋষি বিশ্বামিত্রের নিকট হইতে একটু লবণ ভিক্ষা করিয়া আন ৷” এই প্রশ্নে অরুন্ধতী দেবী বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “প্রভু, এ কি আজ্ঞা করিতেছেন, আমি কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না ৷ যে আমার শতপুত্র হইতে বঞ্চিত করিয়াছে —”এই কথা বলিতে বলিতে দেবীর সুর অশ্রুপূর্ণ হইয়া উঠিল, সমস্ত পূৰ্বস্মৃতি জাগিয়া উঠিল, সে অপূৰ্ব্ব শান্তির আলয় গভীর হৃদয় ব্যথিত হইল, তিনি বলিতে লাগিলেন, – “আমার শতপুত্র এই জোছনাশােভিত রাত্রে বেদগান করিয়া বেড়াইত, শতপুত্রই আমার বেদজ্ঞ ও ব্রহ্মনিষ্ঠ, আমার এইরূপ শতপুত্রই সে বিনষ্ট করিয়াছে; তাহার আশ্রম হইতে আমাকে লবণ ভিক্ষা করিয়া আনিতে বলিতেছেন? আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়াছি ৷” ধীরে ধীরে ঋষির মুখ জ্যোতিপূর্ণ হইয়া উঠিল, ধীরে ধীরে সাগরােপম হৃদয় হইতে এই কয়টী বাক্য নিঃসৃত হইল, – “দেবী, আমি তাহাকে যে ভালবাসি ৷” অরুন্ধতীর বিস্ময় আরও বর্ধিত হইল, তিনি বলিলেন, “আপনি যদি তাহাকে ভালবাসেন ত তাহাকে ‘ব্রহ্মর্ষি’ বলিয়া সম্বােধন করিলেই ত জঞ্জাল মিটিয়া যাইত, আমাকেও শতপুত্র হইতে বঞ্চিত হইতে হইত না ৷” ঋষির মুখ অপূৰ্ব্ব শ্রী ৷ ধারণ করিল, বলিলেন, “তাহাকে ভালবাসি বলিয়াই ত তাহাকে ব্রহ্মর্ষি বলি নাই, আমি তাহাকে ব্রহ্মর্ষি বলি নাই বলিয়াই তাহার ব্রহ্মর্ষি হইবার আশা আছে ৷”
আজ বিশ্বামিত্র ক্রোধে জ্ঞানশূন্য ৷ আজ আর তাহার তপস্যায় মনােনিবেশ হইতেছে না ৷ তিনি সঙ্কল্প করিয়াছেন আজ যদি বশিষ্ঠ তাহাকে ব্রহ্মর্ষি না বলেন তাহা হইলে তাহার প্রাণসংহার করিবেন ৷ সঙ্কল্প কার্য্যে পরিণত করিবার জন্য তিনি তরবারি হস্তে কুটির হইতে বহির্গত হইলেন ৷ ধীরে ধীরে বশিষ্ঠদেবের কুটির পার্শ্বে আসিয়া দাঁড়াইলেন ৷ দাড়াইয়া দাঁড়াইয়া বশিষ্ঠদেবের সমস্ত কথা শুনিলেন ৷ মুষ্টিবদ্ধ তরবারি হস্তে শিথিল হইয়া পড়িল ৷ ভাবিলেন, “কি করিয়াছি, না জানিয়া কি অন্যায় কাৰ্য্য করিয়াছি, না জানিয়া কাহার নির্বিকার চিত্তে ব্যথা দিতে চেষ্টা করিয়াছি ৷” হৃদয়ে শত বৃশ্চিক দংশন যন্ত্রণা অনুভূত হইল ৷ অনুতাপে হৃদয় দগ্ধ হইতে লাগিল ৷ দৌড়িয়া গিয়া বশিষ্ঠের পদপ্রান্তে পতিত হইলেন ৷ কিছুক্ষণ বাক্য-স্কৃৰ্ত্তি হইল না, ক্ষণপরে বলিলেন, – “ক্ষমা করুন, কিন্তু আমি ক্ষমাভিক্ষারও অযােগ্য ৷” গর্বিত হৃদয় অন্য কিছু বলিতে পারিল না ৷ কিন্তু বশিষ্ঠ কি করিলেন? বশিষ্ঠ দুই হাত দিয়া তাহাকে ধরিয়া বলিলেন, “উঠ, ব্রহ্মর্ষি উঠ ৷” দ্বিগুণ লজ্জায় বিশ্বামিত্র বলিলেন, “প্রভু, কেন লজ্জা দেন ৷” বশিষ্ঠদেব উত্তর করিলেন, “আমি কখনও মিথ্যা বলি না – আজ তুমি ব্ৰহ্মর্ষি হইয়াছ, আজ তুমি অভিমান ত্যাগ করিয়াছ ৷ আজ তুমি ব্রহ্মর্ষি-পদ লাভ করিয়াছ ৷” বিশ্বমিত্র বলিলেন, “আমাকে আপনি ব্রহ্মজ্ঞান শিক্ষা দিন ৷” বশিষ্ঠ উত্তর করিলেন, “অনন্তদেবের নিকট যাও, তিনিই তােমাকে ব্রহ্মজ্ঞান শিক্ষা দিবেন ৷” অনন্তদেব যেখানে পৃথিবী মস্তকে ধরিয়া আছেন বিশ্বামিত্র সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন ৷ অনন্তদেব বলিলেন, “আমি তােমায় ব্রহ্মজ্ঞান শিক্ষা দিতে পারি যদি তুমি এই পৃথিবী মস্তকে ধারণ করিতে পার ৷” তপােবলে গর্বিত বিশ্বামিত্র বলিলেন, “আপনি পৃথিবী ত্যাগ করুন আমি মস্তকে ধারণ করিতেছি ৷” অনন্তদেব বলিলেন, “ধারণ কর, আমি ত্যাগ করিলাম ৷” শূন্যে পৃথিবী ঘুরিতে ঘুরিতে পড়িতে লাগিল ৷
বিশ্বামিত্র ডাকিয়া বলিতেছেন, “আমি সমস্ত তপস্যার ফল অর্পণ করিতেছি পৃথিবী ধৃত হউক” – তথাপি পৃথিবী স্থির হইল না ৷ উচ্চৈঃস্বরে অনন্তদেব বলিলেন, “বিশ্বামিত্র এত তপস্যা কর নাই যে পৃথিবী ধারণ করিবে, কখনও কি সাধুসঙ্গ করিয়াছ? তাহার ফল অর্পণ কর ৷” বিশ্বামিত্র বলিলেন, “এক মুহূর্ত বশিষ্ঠের সঙ্গ করিয়াছি ৷” অনন্তদেব বলিলেন, “তবে সেই ফল অর্পণ কর ৷” বিশ্বামিত্র বলিলেন, “আমি সেই ফল অর্পণ করিতেছি ৷” ধীরে ধীরে পৃথিবী স্থির হইল ৷ তখন বিশ্বামিত্র বলিলেন, “এখন আমায় ব্রহ্মজ্ঞান দিন ৷” অনন্তদেব বলিলেন, “মূখ বিশ্বামিত্র! যাঁর এক মুহূর্ত সঙ্গফলে পৃথিবী ধৃত হইল তাহাকে ছাড়িয়া আমার নিকট ব্রহ্মজ্ঞান চাহিতেছ?” বিশ্বামিত্রের ক্রোধ হইল, ভাবিলেন বশিষ্ঠদেব তাহাকে তবে প্রতারণা করিয়াছেন ৷ দ্রুত তাহার নিকট গমন করিয়া বলিলেন, “আপনি আমায় কেন প্রতারণা করিলেন?” বশিষ্ঠদেব অতি ধীর গম্ভীরভাবে উত্তর দিলেন, “আমি যদি তখন তােমায় ব্রহ্মজ্ঞান শিক্ষা দিতাম, তােমার তাহাতে বিশ্বাস হইত না, এখন তােমার বিশ্বাস হইবে ৷” বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠের নিকট ব্রহ্মজ্ঞান শিক্ষা করিলেন ৷ ভারতে এমন ঋষি ছিলেন, এমন সাধু ছিলেন, এমন ক্ষমার আদর্শ ছিল ৷ এমন তপস্যার বল ছিল যাহা দ্বারা পৃথিবী ধারণ করা যায় ৷ ভারতে আবার সেইরূপ ঋষি জন্মগ্রহণ করিতেছেন যাঁহাদের প্রভায় পূর্বতন ঋষি-দিগের জ্যোতি হীনপ্রভ হইয়া যাইবে, যাঁহারা আবার ভারতকে পূৰ্বগৌরব হইতে অধিকতর গৌরবে প্রতিষ্ঠিত করিবেন ৷
Home
Sri Aurobindo
Books
Bengali
Share your feedback. Help us improve. Or ask a question.